ঢাকা , বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ , ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​মেহেরপুরে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে মাংস সমিতি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩০-০৩-২০২৫ ০৩:৫৯:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০৩-২০২৫ ০৭:৩১:২৪ অপরাহ্ন
​মেহেরপুরে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে মাংস সমিতি ​ছবি: সংগৃহীত
মেহেরপুরের গাংনীতে পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে ‘মাংস সমিতি’। উপজেলার শহর ও গ্রামপর্যায়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের সমিতি ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশুর মাংস ভাগ করে নেওয়াই মূল উদ্দেশ্য সমিতির সদস্যদের। এতে করে নিম্নআয়ের মানুষের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি একবারে কিছু বাড়তি মাংস পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে সমিতির সদস্যরাসহ পুরো পরিবার।

সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ১০ থেকে ১২ বছর আগে দু-এক জায়গায় এ ধরনের সমিতি চালু  থাকলেও বর্তমানে এর বিস্তার লাভ করেছে প্রতিটি পাড়া মহল্লায়। এ বছর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাতে প্রায় প্রতিটি মহল্লাতেই এ ধরনের মাংস সমিতি চোখে পড়ছে। প্রতিটি সমিতিতে ২০ থেকে শুরু করে ৫০ জন পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা রয়েছে। এ ধরনের সমিতির সংখ্যা বর্তমানে কম নয়। সমিতির সদস্যরা সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হারে চাঁদা জমা দেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বিশেষ করে ঈদের দু-এক দিন আগে গরু বা ছাগল কিনে জবাই করে সদস্য রেশিও অনুযায়ী মাংস ভাগ করে নেন। ওই গরু বা ছাগলের চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে প্রাথমিক তহবিল গঠন করে শুরু হয় পরের বছরের জন্য সমিতির কার্যক্রম।

শুরুতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকেরা এ ধরনের সমিতি করলেও বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মানুষও মাংস সমিতি করার জন্য ঝুঁকছে। গাংনী পৌর এলাকার উত্তর পাড়াতে ৪০ জন সদস্য নিয়ে এ ধরনের একটি সমিতি গঠন করেছিলেন সাহাবুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। ওই সমিতির সদস্য সাহাবুল ইসলাম বলেন, তাদের সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ৪০ জন। প্রত্যেকে সপ্তাহে ৫০ টাকা করে জমা দিতেন। ৫০ সপ্তাহে তাদের সমিতিতে জমা হয় এক লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে গত বুধবার (২৬ মার্চ) তারা একটি গরু কিনে এনে মাংস ভাগ করে নিয়েছেন। প্রত্যেকের ভাগে পাঁচ কেজি করে মাংস পেয়েছে। শুধু তাদের ওয়ার্ডেই এ ধরনের অন্তত ১০টি ‘মাংস সমিতি’ রয়েছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের যারা এসব সমিতি করছেন, তাদের উদ্দেশ্য উৎসবের সময় বাড়তি চাপ কমানো। সেই সঙ্গে বছরে অন্তত দুবার একটু বেশি পরিমাণে মাংসের স্বাদ গ্রহণ করেন সমিতির সদস্যরা।

উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের মাসুদ রানা জানান, কুরবানির ঈদের পরপরই ২২ জন সদস্য মিলে তারা মাংস সমিতি গঠন করেছেন। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ১০০ টাকা করে জমা করে ঈদুল ফিতরের আগে একটি গরু কিনে প্রত্যেকে সাড়ে ছয় কেজি করে মাংস পেয়েছেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে গরু মহিষের প্রতি কেজি মাংস সাড়ে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গরু কিনে প্রতি কেজি মাংস সাড়ে ছয়শ টাকা করে পরতা পড়েছে। তাদের ওই পাড়ায় ১০টির মত মাংস সমিতি রয়েছে।

গাংনী পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড ভিটাপাড়ার আবু হানিফ বলেন, ঈদের আগে নতুন জামা-কাপড় কেনাসহ খরচের অনেক চাপ থাকে। সমিতি করলে একবারে অনায়াসে ৫-৭ কেজি মাংস পাওয়া যায়। সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সঞ্চয় জমা দিতে পারায় মাংসের খরচটাও গায়ে লাগে না। ওই মাংস দিয়ে ঈদের কয়েকদিন নিজের পরিবারসহ অতিথিদের আপ্যায়ন করা যায়। ফলে সকলের সঙ্গে ঈদের আনন্দটাও ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়।

পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড গাংনী উত্তরপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, ঈদুল ফিতরে মাংস বিক্রি করে বড় অংকের টাকা লাভবান হবেন ভেবে গরু মহিষ মিলে ১১টি পশু কিনেছেন। পাড়ায় পাড়ায় মাংস সমিতি গঠন হওয়ায় মাংসের বিক্রি কমে গেছে। ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতে তিনি তিনটি মহিষ জবাইয়ের আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সমিতি করলে নিজেরা গরু কিনে এনে ভালো মাংস পাওয়া যায়। তাছাড়া খরচের চাপটাও অনেক কমে যায়। সেই সঙ্গে সকল সদস্যদের মাঝে ঐক্য গড়ে ওঠে ও পারস্পরিক সম্পর্কটাও মজবুত হয়।

উপজেলা জুড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের এই উদ্যোগকে ‘সমন্বিত চেষ্টার সুফল’ বলে মনে করেন গাংনী বাজার মসজিদের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ মহসিন আলী। তিনি বলেন, আমার ইটভাটার শ্রমিকরা দুইটি মাংস সমিতি গঠন করেছে। একটিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। অন্যটিতে আরও কিছু টাকা বেশি জমা হয়েছে। ওই টাকায় গরু কিনে প্রত্যেকে ৫-৭ কেজি মাংস পাওয়াটা বেশ আনন্দের। তাছাড়া পাড়া মহল্লায় মাংস সমিতি গড়ে ওঠার ফলে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধের উন্নতি ও একতাবদ্ধ হওয়া শক্তির বাস্তবায়ন ঘটে থাকে। মানুষ নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে। তাদের এই অপেক্ষা সময়টুকু উৎসবের আনন্দটাকে আরও বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়।

  
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ